Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

নিরাপদ ও সুস্থ পৃথিবী

মৌলিক খাদ্য গোষ্ঠীতে বিদ্যমান খাবারের সবকটি উপাদান যেমন-কার্বহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেলসের সমন্বয়ে সুষম খাবার গঠিত হয় এবং এই খাবার দেহে শক্তি উৎপাদান, বৃদ্ধি সাধন, রোগ প্রতিরোধ, ক্ষয় পূরণ করে। সুস্থ থাকা ও সঠিকভাবে কাজ করার জন্য এবং দেহের প্রতিটি কোষ, কলা  ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের জন্য সুষম খাবারের প্রয়োজন। উপযুক্ত পুষ্টিকর খাবার না খেলে খুব সহজেই মানুষ রোগাক্রান্ত হতে পারে, এছাড়া ইনফেকশন, অবসাদ ও দুর্বল কার্যক্ষমতা দেখা দেয়। যেমন- গর্ভবতী মায়ের গর্ভের শিশুর উপযুক্ত বৃদ্ধি ও মায়ের সুস্থতার জন্য অতিরিক্ত সুষম খাবার না খেলে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ঠিকমতো হয় না বরং মা ও শিশু দুজনেই নানা রকম পুষ্টিহীনতায় ভোগে। স্তন্যদাত্রী মায়ের শিশুকে পর্যাপ্ত দুধ সরবরাহের জন্য অতিরিক্ত খাবার না দিলে শিশু পর্যাপ্ত দুধ থেকে বঞ্চিত হয়। ঠিক তেমনি বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও সুষম খাবারের অভাবে তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ও কিশোর কিশোরীদের ঠিকমতো বেড়ে ওঠা ব্যাহত হয় এবং নানা রকম পুষ্টিহীনতার উপসর্গ দেখা দেয়। এছাড়াও বৃদ্ধদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকা এবং অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে রোগ অনুযায়ী যথার্থ সুষম খাবারের প্রয়োজন। এই সুষম খাবার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকা বাঞ্ছণীয়।


সুষম খাবার মানুষের বয়স, ওজন, উচ্চতা, কাজের ধরন, আবহাওয়া ও অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। খাবারের মেনু পরিকল্পনা যে বিষয়ের ওপর নির্ভর করে তা হচ্ছে -  ১. উপযুক্ত পুষ্টি জ্ঞান ২. পরিবারের সদস্যদের পছন্দ রুচি  ৩. খাদ্য উপাদান ৪. দেশের অর্থনীতি ৫. খাদ্য সরবরাহ  ৬. খাবারের পর্যাপ্ততা ৭. খাদ্য বিনিময় সম্পর্কে ধারণা         ৮. মৌলিক খাদ্য গোষ্ঠী সম্পর্কে ধারণা ৯. আবহাওয়া  ১০. দুর্যোগ ১১. সংস্কৃতি ইত্যাদি।
এছাড়াও পরিবারের সদস্যদের ওপর ভিত্তি করে মেনু পরিকল্পনা করতে হয়। যেমন-
ক. শিশুর জন্য পরিপূরক খাবার
খ. গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়ের খাবার
গ. কিশোর কিশোরীদের খাদ্য
ঘ. বৃদ্ধদের জন্য সহজপাচ্য খাদ্য
ঙ. রোগীর রোগ অনুযায়ী পথ্য।


মাতৃগর্ভ থেকেই শিশুর পুষ্টি শুরু হয়। কাজেই গর্ভে থাকা শিশুর পুষ্টি ও মায়ের সুস্থতার জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে ‘পুষ্টি চাহিদা অনেকটা বেড়ে যায়, যেমন- গর্ভকালীন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পাওয়ায় মায়ের জরায়ু, স্তন্য, নাভী রজ্জু ইত্যাদি অঙ্গের বৃদ্ধি ও বিপাক ক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি পায়। তাই এসব কার্যকলাপের জন্য ক্যালরির চাহিদা বেশি থাকে। এছাড়া গর্ভস্থ সন্তানের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, গ্রন্থি, কলা ও কোষের গঠন ও বৃদ্ধির জন্য এবং মায়ের শিশুর পর্যাপ্ত  রক্ত গঠনের জন্য অতিরিক্ত প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। এজন্য উচ্চ জৈব মূল্যের প্রোটিন যেমন  মাছ, মাংস, ডিম, লৌহ ও ফলিক এসিডের জন্য কলিজা, ভিটামিন ‘সি’ এর জন্য লেবু, আমলকী, পেয়ারা, কাচামরিচ ইতাাদি খাওয়া যায়। বাচ্চার হাড়  হাড্ডি, দাঁত, নখ, চুল যাতে ঠিকমতো গঠন হয় এবং মায়ের হাড় ক্ষয় বা পাতলা না হয় তার জন্য ক্যালসিয়াম, ফরফরাস ও ভিটামিন ‘ডি’ এর প্রয়োজন হয়। আর যদি এসবের অভাব হয় তাহলে মায়ের হাড় থেকে ভ্রƒণের দেহে এসব ব্যবহৃত হয়। ফলে মা ও শিশু দুইজনেরই হাড় দুর্বল হয়। অনেক বাচ্চাকে দেখা যায় একটু দৌড়ালেই তাদের পা  ব্যথা হয়। এজন্য গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত দুধ, ছোটমাছ, ‘ডি’ এর জন্য কডলিভার অয়েল, সবুজ ও রঙিন শাকসবজি খেতে হয় এবং প্রায় প্রতিদিন সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত অন্তত ১৫-২০ মিনিট রোদে থাকতে হয় যাতে   চামড়ায় সরাসরি রোদ লাগে। এতে শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি হয়। থাইরয়েড হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধির জন্য আয়োডিন যুক্ত খাবার খেতে হয়। গর্ভবতী অবস্থায় সব ধরনের পুষ্টি চাহিদা  বৃদ্ধি পায় এবং সেটা মেটানো কঠিন কিছু নয়। সুষম খাদ্য তালিকার মাধ্যমে এই সময়ে ক্যালরি, প্রোটিনসহ অন্যান্য উপাদানের পরিমাণ ধাপে ধাপে বাড়াতে হয়। সঙ্গে মৌসুমি   শাকসবজি ও ফলমূল অবশ্যই খেতে হয়। স্তন্যদানকারী মায়ের খাবারের চাহিদা বিশেষ করে ক্যালরি, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। কারণ- ১. বুকের দুধ নিঃসৃত করবার কাজটি করতে তাকে প্রচুর শক্তি ক্ষয় করতে হয়। প্রায় প্রতিদিন ৬৫০-৮৫০ মিলি লিটার দুধ উৎপাদন করতে হয় তাকে। এর জন্য অতিরিক্ত ২০০-৪০০ ক্যালরি প্রয়োজন হয়। এর দৈনিক স্তন্যদানকারী মায়ের খাদ্য প্রায় ৭০০-১০০০ ক্যালরি সরবরাহ থাকা উচিত। অবশ্য বাচ্চার বয়স ৬ মাস পেরিয়ে গেলে যখন বুকের দুধের পরিমাণ কমে যায় তখন ক্যালরির পরিমাণও কমে যায়।


২. বুকের দুধে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে উৎকৃষ্টমানের প্রোটিন, ক্যালরি, ভিটামিন ও মিনারেল।
৩. মায়ের নিজের দেহ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সব ধরনের পুষ্টি প্রয়োজন।
এই সমস্ত চাহিদা পূরণের জন্য স্তন্যদানকালে প্রসূতি মায়ের যে চাহিদা থাকে তা গর্ভাবস্থার চেয়ে অনেক বেশি।
জন্ম থেকে ৬ মাস পর্যন্ত শিশুর ওজন বৃদ্ধির হার উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে পার্থক্য দেখা দেয়। এর কারণ        ৬ মাস বয়সের পর শিশুর বিশেষ পুষ্টি চাহিদা সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব। মাতৃগর্ভ থেকে যেসব উপাদান নিয়ে শিশু জন্ম নেয় তা ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ শিশুকে নানা রকম অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা করে। তাই পরবর্তীতে বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার দেয়া হয়। এই খাবার দেয়ার উদ্দেশ্য হলো পারিবারিক খাবারে অভ্যস্ত করানো যাতে শিশুর পুষ্টি চাহিদা অনুযায়ী তার সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকে।
জন্মের পর থেকে বাচ্চাদের যে বর্ধন প্রক্রিয়া চলে তা প্রায় ১৮/১৯ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে। এই সময় পুষ্টির চাহিদাও বেশি থাকে। কৈশোরে যদি এই চাহিদা পূরণ না হয়, তবে দেহ গঠন ও বর্ধন যথাযথভাবে হবে না। বরং নানারকম     অপুষ্টির লক্ষণ দেখা দিবে এবং দুর্বল ও অপুষ্ট হওয়ায়  সংক্রামণ ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হবে। ফলে সারা জীবনই দুর্বল ও রোগা হয়ে বেঁচে থাকতে হবে। অবশ্য কৈশোরে সবার পুষ্টি চাহিদা একরকম হয় না। এটা নির্ভর করে ১. ছেলে মেয়ে ভেদে, ২. বয়স ভেদে, ৩. আকৃতি ভেদে। এসব বিষয় অনুযায়ী পুষ্টি চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় হয়। তবে কৈশোরে ছেলে মেয়েদের খাবারে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো থাকতে হবে।
ক্স কর্মশক্তি জোগাবার  জন্য খাবার ক্যালরি বহুল হতে হবে।
ক্স ক্ষয়পূরণ ও দ্রুত বৃদ্ধি সাধনের জন্য খাবারে প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকতে হবে।
ক্স যেহেতু এই সময় হাড়ের বর্ধন হয় এজন্য ক্যালসিয়াম, ফরফরাস, ভিটামিন ডিসহ অন্যান্য ভিটামিন ডি সহ অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ লবণের প্রাচুর্যতা থাকতে হবে।
কিশোর কিশোরীদের খাবারে বেশ যত্নশীল হতে হয়-কারণ এই সময় তাদের ছেলে মেয়ে ভেদে বেশ কিছুটা শারীরিক পরিবর্তন হয়।
প্রাপ্ত বয়স্কদের পুষ্টি চাহিদা নির্ভর করে- ১. লিঙ্গ, ২. বয়স,    ৩. ওজন, ৪. উচ্চতা, ৫. শারীরিক পরিশ্রম এবং যদি কোনো ব্যক্তি কোনো ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় তবে তার কি ধরনের রোগ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর।


৬০ বছর বয়স হলেই তাকে বৃদ্ধ বলা হয়। ৪০-৪৫ বছর হতে দেহের বিভিন্ন গ্রন্থি ও কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যভাসের দরুন যদি কারো কোনো একটি খাদ্য উপাদানের অভাব থাকে বা দীর্ঘদিন চলতে থাকে, তবে তার প্রভাব বয়স বাড়ার  সাথে সাথে দেহে ফুটে ওঠে। বর্তমানে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানের অনেক উন্নতি হয়েছে যার ফলে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। কাজেই দেশে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা নেহায়েতই কম নয়। জীবনের বিভিন্ন সময়ের মতো বার্ধ্যক্যেও সুষম খাবার তৈরি করতে খাদ্যের মৌলিক গোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করতে হয়। এই সময় অনেকেরই অরুচি ও পরিপাকে অসুবিধার দরুন খাদ্য গ্রহণে আগ্রহ কমে যায়। দাঁতও সব থাকে না বা থাকলে হয়তো শক্ত খাবার খাওয়ার মতো অবস্থায় থাকে না। আবার এই বয়সে হাঁড়ের ক্ষয়জনিত রোগেও ভোগেন তারা। তাই এসব বিষয়ের ওপর খেয়াল রেখে খাবার এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে করে খাবার নরম ও সহজপাচ্য হয় এবং ক্যালসিয়াম ও লৌহ জাতীয় উপাদান সমৃদ্ধ হয়। ক্যালসিয়ামের জন্য দুধ ও দুধের তৈরি খাবার যেমন- ছানা, পনির, পায়েস, দই এসব খাওয়া যায়। ছোট মাছ ও খাওয়া ভালো। লৌহের জন্য মাঝে মাঝে কলিজা দেয়া যেতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য মৌসুমি শাকসবজি ও ফল খাওয়া যেতে পারে। ওজন বেশি থাকলে বাড়তি ওজন কমিয়ে  ফেললে ভালো হয়। দৈনিক হাঁটাচলা ও কিছুটা শারীরিক পরিশ্রম সুস্থ থাকার জন্য আবশ্যক। এই বয়সে- আলগা লবণ ও লবণাক্ত খাবার, চিনি-মিষ্টি-মধু-মিষ্টান্ন, মিষ্টি ফল কম খাওয়া উচিত। মদ, ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন বাদ দেওয়া উচিত।


বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। সাথে সাথে মানুষের মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। বর্তমানে দেশের সব জেলাতেই খাদ্যের সব মৌলিক উপাদান সংবলিত খাবারের প্রাচুর্যতা রয়েছে। কারন দেশের যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও ব্যপক উন্নতি হয়েছে। এক জেলার খাবার অন্য জেলায় প্রয়োজন অনুযায়ী খুব সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে। নিরাপদ ও সুস্থ পৃথিবী গড়তে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো সচেতন থাকতে হবে।
ক. খাদ্যের মৌলিক গোষ্ঠী সম্পর্কে পর্যাপ্ত পুষ্টিজ্ঞান।
খ. শুধু একই ধরনের খাবার না খাওয়া।
গ. খাদ্যের প্রাপ্ততা অনুযায়ী সুষম খাবার তৈরি।
ঘ. খাদ্য বিনিময় সম্পর্কে সঠিক ধারণা।
ঙ. বেশি দামি খাবারকে বেশি পুষ্টিকর মনে না করা।
চ. পরিবারের আয় অনুযায়ী অল্প দামি খাবার দিয়ে সুষম খাবার তৈরি করা।
ছ. খাবার তৈরির আগে ও খাবারের সময় সাবান দিয়ে হাত ধোয়া।
জ. শাকসবজি সঠিক নিয়মে ধোয়া এবং সঠিক উপায়ে রান্না করা।
ঝ. নিয়মিত কৃমির ওষুধ খাওয়া।

 

খালেদা খাতুন

প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা, বারডেম, শাহবাগ, ঢাকা, মোবাইল-০১৭০৩৭৯৬২৬৯, ই- মেইল-birdem@yahoo.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon